শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : টেকনাফে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কর্তৃক অপহৃত এক ব্যক্তিকে ‘মুক্তিপণের বিনিময়ে’ ঘটনার তিন দিন পর ছাড়িয়ে এনেছে স্বজনরা।
ভূক্তভোগী ছৈয়দ আলম (৫০) টেকনাফ পৌরসভার মধ্যম জালিয়াপাড়ার মৃত আমির আহম্মদের ছেলে।
বৃহস্পতিবার ভোররাতে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক এলাকায় অপহৃত ব্যক্তিকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান ভূক্তভোগী ব্যক্তির স্ত্রী হালিমা বেগম।
তবে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার ব্যাপারে তারা অবহিত নয়।
ভূক্তভোগী ব্যক্তির স্বজনরা জানিয়েছেন, গত সোমবার (২২ নভেম্বর) রাতে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটের টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে বাড়ী ফেরার পথে স্থলবন্দর সংলগ্ন ১৪ নম্বর ব্রিজ এলাকায় মুখোশধারী একদল অজ্ঞাত দূর্বৃত্ত অস্ত্রের মুখে ছৈয়দ আলমকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে অপহরণকারিরা তাকে দমদমিয়া এলাকার গহীণ পাহাড়ের দিকে নিয়ে যায়। ঘটনার পর খবর পেয়ে অপহৃতের স্বজনরা ওইদিন রাতেই টেকনাফ থানা পুলিশকে মৌখিকভাবে অবহিত করেন।
ঘটনার দিন রাতে টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, “ টেকনাফ স্থলবন্দর সংলগ্ন দমদমিয়া এলাকায় এক ব্যক্তি দূর্বৃত্তদের কর্তৃক অপহৃত হয়েছে বলে শুনেছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাই এবং খোঁজ-খবর নিতে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন। পুলিশ এ ব্যাপারে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ”
মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরে আসা ছৈয়দ আলমের স্ত্রী হালিমা বেগম বলেন, গত সোমবার রাতে তার স্বামীকে অপহৃত হওয়ার পর অপহরণকারিরা দমদমিয়া এলাকার গহীণ পাহাড়ে জিন্মি করে রাখে। পরে অপহরণকারিরা মোবাইল ফোনে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে ছৈয়দ আলমকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়।
“ পরে টাকার লেনদেন নিয়ে অপহরণকারিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগ হয়। এক পর্যায়ে অপহরণকারিরা আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে আমার স্বামীকে ছেড়ে দিতে রাজী হয়। ”
ভূক্তভোগীর স্ত্রী বলেন, “ বুধবার মধ্যরাতে অপহরণকারিদের কাছে দাবিকৃত টাকা পৌঁছাতে একটি গাড়ী যোগে আমার ছেলে মো. রাসেল নিয়ে টেকনাফের দমদমিয়া এলাকায় যাই। টাকাগুলো নিতে অপহরণকারিরা আমাদের বেশ কয়েকবার স্থান পরিবর্তন করায়। এক পর্যায়ে ভোররাতে দমদমিয়া ন্যাচার পার্কের ভিতরে যেতে বলা হয়। ”
“ পরে নগদ আড়াই লাখ টাকা নিয়ে অবস্থান করার এক পর্যায়ে মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারী দুই যুবক সেখানে উপস্থিত হয়। টাকাগুলো তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর আমার স্বামী ছৈয়দ আলমকে ছেড়ে দেয়। ”
হালিমা জানান, মুক্তিপণের টাকা আদায়ের জন্য তার স্বামীকে অপহরণকারিরা নির্যাতন চালিয়েছে। পরে ছাড়িয়ে আনার পর তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হয়েছে। পরে বৃহস্পতিবার বিকালে তার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে টেকনাফ থানায় হাজির হয়ে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে জানানো হয়েছে।
ভূক্তভোগীর স্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, সোমবার রাতে ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশকে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ পরে তাদের সঙ্গে আর কোন ধরণের যোগাযোগ করেননি।
মুক্তিপণের বিনিময়ে ফিরে আসা ছৈয়দ আলম বলেন, “ মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কথাবার্তা রোহিঙ্গাদের ভাষার মত। তাদের কাছে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। গহীন পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের গোপন আস্তানায় জিন্মি রেখে মুক্তিপণের জন্য আমার উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে। ”
এ নিয়ে টেকনাফ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল আলীম ও পরিদর্শক (অপারেশন) খোরশেদ আলমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে এ ধরণের কোন তথ্য তাদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন। তবে তারা এ ব্যাপারে ওসির সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে কথা বলতে টেকনাফ থানার ওসি মো. হাফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিবার কল দেয়া হলে তিনি কোন ধরণের সাড়া দেননি।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply